
স্টাফ রিপোর্টার:
আজ সেই নেতা যিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধান মন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের মৃত্যুবারষিকী । চৌদ্দগ্রামের এই মহান নেতাকে সবাই মনে না রাখলেও একজন ব্যক্তি শত ব্যস্ততার মাঝেও মনে রেখেছেন – মৃত্যুর ঠিক দুইদিন আগেই কাজী জাফর আহমেদ তার জন্য জাতীয় পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছেন । এখানে আমাদের সময়ের সেই পেপার কাটিং টি দেয়া হলো । জীবদ্দশায় কাজী জাফর প্রকাশ্যে সবার সামনে ঘোষনা করেছিলেন যে আমার পরে চৌদ্দগ্রামের কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি যদি জাতীয় নেতা হয় তাহলে নয়ন বাংগালীই হতে পারবে চৌদগ্রামের গর্বিত সন্তান । কিন্তু নয়ন বাংগালী এখন সম্পূর্ণ পর্দার অন্তরালে এক ব্যতিক্রমি রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে বাংলাদেশে ভিন্ন ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন । নয়ন বাংগালী ১৯৭২ সালের চৌদ্দগ্রামের ফাল্গুনকরার এক ঐতিহ্য বাহী মজুমদার পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন । তার বাবা একজন উদ্ধর্তন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন আর মা ছিলেন জনপ্রতিনিধি ।
নয়ন বাংগালি বাংলা একাডেমী স্কুল থেকে এসএসসি তে প্রথম শ্রেনী ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসিতে প্রথম শ্রেনী তে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন পরবর্তীতে সে তা ছেড়ে দিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় এ এলএলবি ভর্তি হন কিন্তু হঠাৎ বাবার মৃত্যুতে এই ব্যায় বহুল ব্যরিষ্টার হওয়ার স্বপ্ন বাদ দিয়ে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ ও গবেষনা ইনস্টিটিউট বিএসএস ও এম এসএস সম্পন্ন করেন । মাস্টার্স ডিগ্রিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নয়ন বাংগালির প্রথম শ্রেনীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন । তারপর সেই আইনপেশায় যাওয়ার স্বপ্ন তাকে তাড়া করে তাই তিনি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে তথা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি দ্বিতীয় শ্রেনীতে পাশ করেন । তিনি ২০০১ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী হিসেবে এনরোলমেন্ট নেন এবং ঢাকা বারে প্রায় সাত বছর আইনপেশায় নিয়জিত থেকে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এ এনরোলমেন্ট নেন । রাজনীতির শুরু টা ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু করলেও সেই ১৯৮৮ সালে কিন্তু ১ মাসের মাথায় তা ছেড়ে দিয়ে শ্রমিক রাজনীতি শুরু করেন । সে যে এলাকায় বসবাস করতো তথা মিরপুরের গার্মেন্টস শ্রমিক দের দুঃখ দুর্দশা দেখে ভাবেন ট্রেড ইউনিয়ন হচ্ছে মৌলিক রাজনীতি আর ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে লেজুরবৃত্তির গুন্ডামী তাই তার বিশাল সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ১২ টি বছর ট্রেড ইউনিয়নে সময় দেন – কথায় আছে এক সময়ে তিনি যদি শুধু ছাত্র রাজনীতি করতেন তাহলে সে ছাত্র দলের সভাপতি বা সেক্রেটারি হয়ে জাতীয় নেতা হতে পারতেন ।
কিন্তু তাকে জাতীয় নেতা হওয়া টানে না । তাকে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শ্রেষ্ট যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পদক দেন ২০০২ সালে এবং ঐ বছরই কমনওয়েলথে ইউথ এম্বাসেডর নিয়োগ দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর যুব কল্যন তহবিল বোর্ডের পরিচালক রাস্ট্রপতি দ্বারা মনোনয়ন দেন – কিন্তু হঠাৎ তার মাথায় আবার পাগলামি ডুকে এবং বলে জাতীয় রাজনীতির চেয়ে গ্রাম রাজনীতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রাম রাজনীতির নোংড়ামী যাকে সবাই টিপপনি কেটে ভিলেজ পলিটিকস বলে তা ঠিক করতে হবে – চলে যান নয়ন বাংগালি গ্রামে – প্রথমে ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক , তারপর চৌদগ্রাম পৌরসভার বিএনপির সভাপতি তারপর চারদলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী হন কিন্তু আওয়ামলীগের ষড়যন্ত্রে বিজয়ী হয়েও তাকে পরাজিত করানো হয় দুই দুইবার তার পর নামে ঝড়- প্রায় ৮/৯ বার গ্রেফতার , ৩৮ টি মিথ্যা মামলা । ক্রস ফায়ারের লিস্টে তার নাম দিয়ে দুইবার মৃত্যু হাত থেকে বাঁচেন । তার মাথায় প্রচন্ড আঘাত করা হয়। বাম হাত ছয় টুকরো করে রাস্তায় মৃত ভেবে ফেলে চলে যান । বেগম খালেদা জিয়া তাকে দিয়ে যুবদল সাজাতে চেয়েছিলো তাই প্রথমে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক পরে যুগ্ম-সম্পাদক করেও জাতীয় রাজনীতিতে ধরে রাখতে পারেন নাই কারন তাকে গ্রাম কিংবা শহরে থাকলে বস্তি বা ক্যাম্পের উর্দুবাসী ও গরীবদের কাছে টানে।
অবশেষে ভারতে ১ বছর , জেনেভায় ১ বছর ও সর্বশেষ আমেরিকার ৭ বছর নির্বাসিত জীবন কাটান ॥ কিন্তু গত সাত বছর নির্বাসিত জীবনে একটি মুহুর্ত নষ্ট করেননি । হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের অনেক অগ্রনী ভূমিকা রাখেন বিশেষ করে রেমিটেন্স শাট ডাউনে উদ্বুদ্ধকরন এবং দেশে দেশে অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ – ভার্জিনিয়ার সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় লিবার্টি ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন তার গবেষনা ছিলো শিক্ষাক্ষেত্রে নেতৃত্ব উন্নয়নে শিক্ষা আইনের উল্লেখযোগ্য ব্যাপ্তি তার উৎকর্ষতা । তাছাড়া হার্ভার্ডের জন এফ কেনেডি স্কুল থেকে পাবলিক লিডারশিপ ডিপ্লোমা ১ বছরের ডিগ্রী নিয়ে হার্ভার্ডের এলামনাই হওয়ার সুযোগ পান । তিনি নূতন রাজনীতির কনসেপ্ট নিয়ে গবেষনা করছেন ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানে। কে বলা হয় সোস্যাল ওয়ার্ক পলিটিকস তথা তিনি পলিটিক্যাল সোস্যাল ওয়ার্কার তৈরীর মিশনে ব্যস্ত ।এখনো সবাই তাকে দেশে ফিরে এমপি নির্বাচন করতে বললেও সে প্রত্যাখা করেন ॥ দলের হাই কমান্ড তার ইউএসএ বাসভবনে এসে দেশে ফেরার অনুরোধ করে জাতীয় সংসদে যাওয়ার আশ্বাস দিলেও তিনি বলেন যে পৃথিবীতে এমপি মন্ত্রী হলেই মানুষ রাজনীতিবিদ হয় না । তিনি এখন ফিরবেন কিনা জানিনা তবে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে জানান যে এখন আসলেই আমার মিরপুর পল্লবী এলাকায় কিংবা চৌদ্দগ্রামে আওয়াজ উঠে যাবে আমি এমপি হওয়ার জন্য আসছি এতে বড় ধরনের সংঘাত ও আভ্যন্তরিন কলহ এতোই বাড়বে যে তাতে আমাকে আমার মিশন থেকে দুরে রাখবে । নয়ন বাংগালী জানান তিনি রাজনীতির শিক্ষক হতে চান এমপি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ না । এমন একজন ভিন্ন চিন্তা করা মানুষকেই কাজী জাফর আহমেদ চিনতে পেড়েছেন আজ থেকে ১৫ বছর আগে ।